শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন

News Headline :
রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাতটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা যানজট নিরসন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আরএমপি’র মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে পাবনায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ১জন আহত শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত মান্দায় বিল উন্মুক্তের দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন সভাপতির স্বৈরাচারী আচরন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে পাবনা শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির হাবিপ্রবিতে আবাসন সংকট-হলে থেকেও অনাবাসিক অনেক ছাত্র রাজশাহী মহানগরীতে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রেফতার ১৪ রাজশাহীতে অর্ধশত বোতল ফেনসিডিল-সহ মাদক কারবারী গ্রেফতার

বিকলাঙ্গ দুই পা নিয়ে ডেলিভারির কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালান রাবির বিশ্বজিৎ

Reading Time: 2 minutes

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
বিকলাঙ্গ দু’টি পা। মেরুদন্ডের হাড়টাও বাঁকা। সোজা হয়ে বসতে পারেন না ঠিকমতো। জন্মলগ্ন থেকেই নিয়তি তাকে সঙ্গ দেয়নি। জন্মটাও দারিদ্র্য পরিবারে। তবে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের কাছে হার মেনেছে সকল প্রতিবন্ধকতা। তাইতো ভর্তি যুদ্ধ জয় করে চান্স পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েও। বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আইবিএ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শ্রী বিশ্বজিৎ দাসের কথা।
বিশ্বজিৎ দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ইনস্টিটিউটের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। পিতা শ্যামপদ দাস ও মাতা সুষমা দাসীর দ্বিতীয় সন্তান তিনি। পৈতৃক নিবাস যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলাধীন সংকরপুর ইউনিয়নের রাজবাড়ীয়া গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই বিশ্বজিৎ ছিলেন প্রখর মেধাশক্তির অধিকারী। শিক্ষাজীবনে প্রত্যেক পরীক্ষাতেই তার অবস্থান ছিল প্রথম সারিদের মধ্যে। বাঘআছড়া ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরিক্ষায় শার্শা থানাতে প্রথম স্থান অধিকার করে সে। এখানেই শেষ নয়। ডা. আফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরিক্ষাতে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে শেষ করেন উচ্চমাধ্যমিক। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাথমিক থেকে এইচএসসি পর্যন্ত থেকেছেন বাঘআচড়া খ্রিষ্টান মিশনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তীব্র আকাঙ্খা জেঁকে বসে মনের মধ্যে। শুরু করেন দিন-রাত বিরামহীন পরিশ্রম। ফল হিসেবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান রাবিতে। কিন্তু আইবিএ’র নৈমিত্তিক খরচ যে বেশ মোটা অঙ্কের! এখন পড়াশোনা চলবে কিভাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর তার পরিবারে আর্থিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। তার খরচ চালানোর সক্ষমতা পরিবারের ছিল না। ফলে নিভে যেতে বসেছিল তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন। তবুও বিশ্বজিৎ হাল ছাড়েননি। তীব্র বাসনা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেও নেমে পড়েন কণ্টকাকীর্ণ উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে। মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সহানুভ‚তি গ্রহণ তার পছন্দনীয় ছিল না। তাই তিনি বেছে নেন ফুডপাÐায় ডেলিভারি বয়ের কাজ। নিজের মোটরচালিত হুইলচেয়ারে রাজশাহী নগরের বিভিন্ন জায়গায় খাবার পৌঁছে দেয় বিশ্বজিৎ। সারাদিনের ক্লাস-পরিক্ষা সমাপ্ত হলে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। তীব্র ক্লান্তি নিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছায় তার কলের গাড়ি। বিশ্বজিৎয়ের সাথে কথা বিস্তারিত। জানান নিজের সফলতার গল্প। তুলে ধরেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর আকাশছোঁয়া স্বপ্নের কথা। পড়াশোনা শেষ করে হতে চান কর্পোরেট পার্সন। ঝুড়ি-কুলা বুনা বাবা-মায়ের দুঃখ ঘুচানোর পাশাপাশি সর্বসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন তার জীবনের অন্যতম স্বপ্ন। নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করে এ কাজ তরান্বিত করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
বিশ্বজিৎ বলেন, দরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। পিতা-মাতা ঝুড়ি-কুলা তৈরি করেন। সেটা বিক্রি করেই কোনোমতে চলে সংসার। প্রথমে তো ভাবতেই পারতাম না বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো আমি পড়তে পারব। আমার স্কুল শিক্ষকদের থেকে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। সেদিনই দৃঢ়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন লালন করতে শুরু করি।
শতবাঁধা পেরিয়ে, অনেক কষ্ট সহ্য করে আমার স্বপ্নকে জয় করেছি। এখনো অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। তারপরও সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যা পেয়েছি অনেক সুস্থসবল মানুষও পায়নি। বিশ্বজিৎ আত্মনির্ভরশীলতার কথা তুলে ধরে আরও জানান, কারো থেকে সাহায্য নেবেন না তিনি। নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য এখন ফুড ডেলিভারির কাজ করেন। আগামীতে টিউশনি পেলে করবেন অথবা ল্যাপটপ কিনে ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের খরচ বহণ করবেন। বিশ্বজিৎ দাসের সহপাঠী তন্ময় কুন্ডু বলেন, ‘বিশ্বজিৎ ক্যাম্পাসে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করে। শারীরিক ও আর্থিক প্রতিক‚লতার পরও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সমাজে অনেকটা বিরল। এ অবস্থার মধ্যেও বিশ্বজিতের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ায় আমরা খুশি।’
কথা হয় বিশ্বজিৎয়ের গর্বিত পিতা শ্যামপদ দাসের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে তেমন কোনো টাকা দিতে পারি না। ওর চেষ্টা ও আগ্রহে আজ এই পর্যন্ত গেছে। ওর স্বপ্নপূরণে আপনারা আর্শীবাদ করবেন।’

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com